Biogas Vehicle Scheme: ভারত প্রতি বছর শুধুমাত্র অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করে। এটি কেবল দেশের অর্থনীতির উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দেয় না, বরং জ্বালানি নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করে তোলে। এখন কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরি এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছেন, তাঁর পরিকল্পনা হল ভারতকে তেল আমদানিকারক থেকে জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ করা।
সরকারের জ্বালানি বিপ্লব পরিকল্পনা কী?
কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরি সম্প্রতি টয়োটা কিরলোস্কর মোটর এবং ওহমিয়াম ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে একটি চুক্তির সময় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে ভারত এখন চারটি প্রধান বিকল্প জ্বালানির (Biogas Vehicle Scheme) উপর দ্রুত কাজ করছে। এই বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে সবুজ হাইড্রোজেন, ইথানল এবং ফ্লেক্স-ফুয়েল, সংকুচিত বায়োগ্যাস (সিবিজি) এবং আইসোবুটানল ডিজেল মিশ্রণ।
এই সমগ্র কৌশলের উদ্দেশ্য হল ভারতে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা, জ্বালানি খরচ কমানো এবং একটি দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা তৈরি করা, যা দেশকে জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে।
হাইড্রোজেন ট্রাকের পরীক্ষা শুরু
সরকার জানিয়েছে যে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি হাইড্রোজেন ট্রাকের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই ট্রাকগুলি দেশের প্রধান হাইওয়ে রুটগুলিতে চালানো হচ্ছে – দিল্লি-আগ্রা, মুম্বাই-পুনে, জামনগর-বদোদরা, ভুবনেশ্বর-পুরী এবং বিশাখাপত্তনম-বিজয়ওয়াড়া। এই ট্রাকগুলিতে হাইড্রোজেন আইসিই (অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন) এবং জ্বালানি সেল প্রযুক্তি উভয়ই ব্যবহার করা হচ্ছে, যা এগুলিকে প্রচলিত ডিজেল যানবাহনের তুলনায় পরিবেশবান্ধব করে তোলে। পরীক্ষামূলক সহায়তার জন্য দেশজুড়ে ৯টি হাইড্রোজেন রিফুয়েলিং স্টেশনও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সবুজ হাইড্রোজেন
নীতিন গডকরি ভারতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি হিসেবে সবুজ হাইড্রোজেনকে ঘোষণা করেছেন। এই হাইড্রোজেন সৌর ও বায়ুশক্তি থেকে উৎপাদিত হয়, এতে কোনও কার্বন নিঃসরণ হয় না, যার ফলে এটি একটি পরিষ্কার জ্বালানিতে পরিণত হয়। গডকরি বিজ্ঞানী, স্টার্টআপ এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে আবর্জনা, বাঁশ, গোবর এবং জৈব বর্জ্য থেকে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের (Biogas Vehicle Scheme) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এনটিপিসি এবং কিছু বেসরকারি কোম্পানি ইতিমধ্যেই এই দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।
ইথানল, নমনীয় জ্বালানি এবং বায়োগ্যাস
গডকরির পরিকল্পনায় ইথানল এবং বায়োগ্যাসকেও (Biogas Vehicle Scheme) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। এখন দেশজুড়ে ২০% ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল বিক্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা তেল আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে। এছাড়াও, টয়োটা ইনোভা হাইক্রসের মতো ফ্লেক্স-ফুয়েল হাইব্রিড গাড়ির প্রোটোটাইপ প্রস্তুত করা হয়েছে এবং শীঘ্রই বাজারে সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ হবে। এছাড়াও, গ্রামীণ এলাকায় কম্প্রেসড বায়োগ্যাস (CBG) প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে, যা কেবল গ্রামে পরিষ্কার জ্বালানি সরবরাহ করবে না বরং কৃষকদের অতিরিক্ত আয়ের উৎসও দেবে। আইসোবুটানল ডিজেল মিশ্রণের উপরও পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে ট্রাক এবং ভারী যানবাহনের জন্য একটি পরিষ্কার জ্বালানি বিকল্প পাওয়া যায়।
ভারতীয় গাড়ি শিল্পে নতুন বিপ্লব
ভারতের অটোমোবাইল সেক্টর এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। নীতিন গডকরির লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের এক নম্বর অটোমোবাইল বাজারে পরিণত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, দেশের বড় অটো কোম্পানিগুলি এখন দ্রুত হাইড্রোজেন, বৈদ্যুতিক, ইথানল এবং হাইব্রিড যানবাহনে বিনিয়োগ করছে।
