ভাটপাড়াঃ ভরা বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে তৃণমূলের অস্তিত্ব ছিল অনেকটা মশাল হাতে অন্ধকারে পথ চলার মতো। সেই সময়ে শিল্পাঞ্চলে ঘাসফুলের ঝান্ডা ওড়ানো ছিল এক অসম সাহসী কাজ। যখন বেশিরভাগ তৃণমূল নেতা হয় আত্মগোপন করে থাকতেন, নয়তো ভয়ে এলাকার বাইরে কাটাতেন, তখন এক ভিন্ন ধাঁচের নেতা লড়াইয়ের ময়দানে টিকে ছিলেন। তিনি হলেন অর্জুন সিং(Arjun Sing), যাকে শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির একমাত্র ‘সলতে’ বললে ভুল হবে না।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ক্ষমতা যখন হাতের মুঠোয় আসে, তখন বহু নেতা জার্সি বদলে সুবিধাবাদী রাজনীতি করেন। কিন্তু অর্জুন সিংয়ের (Arjun Sing) রাজনৈতিক জীবন সেই ছকের বাইরে। সিপিএমের চরম দাপটের সময়েও তিনি চারবার বিধায়ক এবং দু’বার পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর থেকে বোঝা যায়, স্রোতের অনুকূলে নয়, প্রতিকূলেই তার আসল ক্ষমতা। এই ক্ষমতা তিনি প্রমাণ করেছেন ২০১৯ সালেও, যখন রাজনৈতিক বাতাস তার বিরুদ্ধে ছিল, তবুও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সম্প্রতি রাজ্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে তার বাকযুদ্ধ সেই পুরনো দিনের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ব্রাত্য বসু যখন তাকে বাম আমলের নেতা সুবোধ অধিকারীর প্রসঙ্গ টেনে খোঁচা দেন, তখন অর্জুন সিং পাল্টা জবাব দেন যে, ব্রাত্য বসু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় বিধায়ক-মন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু তিনি নিজের লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। এই মন্তব্যে বোঝা যায়, তৃণমূলের মূল স্রোতের নেতাদের থেকে অর্জুন সিংয়ের রাজনৈতিক ভিত্তি আলাদা। তিনি নিজেকে সেইসব তৃণমূল নেতাদের থেকে আলাদা করতে চেয়েছেন, যারা কঠিন সময়ে দলের পাশে ছিলেন না।
অর্জুন সিংয়ের দাবি অনুযায়ী, তার বাবাও তিনবারের বিধায়ক এবং পুরসভার উপ-পুরপ্রধান ছিলেন। তার ছেলে পবন সিংও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দু’বার বিধায়ক হয়েছেন। এটি প্রমাণ করে যে, রাজনীতি তাদের রক্তে। ক্ষমতার লোভে নয়, বরং আদর্শ এবং লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়েই এই পরিবার রাজনীতি করে।
বাম আমলে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনতে যারা সত্যিই লড়াই করেছেন, তাদের অনেকেই আজ দলের বাইরে। এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে অর্জুন সিংয়ের মতো নেতারা নিজেদের আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি শুধু একজন নেতা নন, বরং শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে এক ‘ভিন্ন ধারার’ প্রতীক, যিনি প্রমাণ করেছেন যে, স্রোতের বিরুদ্ধে লড়েও বিজয় সম্ভব।