শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তান ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি নতুন সতর্কবার্তা (America Warns) প্রকাশ করেছে, যা দেশের বিভিন্ন অংশে সন্ত্রাসবাদ এবং সশস্ত্র সংঘাতের বাড়তে থাকা হুমকির প্রতি ইঙ্গিত করে। এই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক আমেরিকান নাগরিকদের অবশ্যই পুনরায় তাদের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে হবে, বিশেষত বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া (KPK) প্রদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে।
সন্ত্রাসী সহিংসতা এবং সশস্ত্র সংঘাত
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিশেষ কিছু অঞ্চল যেমন ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত, কাশ্মীর, বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলা ও সশস্ত্র সংঘাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এই অঞ্চলগুলোতে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেমন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নাগরিকদের এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্তানের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সতর্কবার্তা
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তার সতর্কবার্তায় পাকিস্তান ভ্রমণের জন্য ‘লেভেল ৩’ পরামর্শ দিয়েছে, যা নাগরিকদের পুনরায় তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা বিবেচনা করতে বলছে। এর পাশাপাশি, বিশেষত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে এবং কাশ্মীরের সংলগ্ন এলাকায়, যেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল, সেসব অঞ্চলে ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এছাড়া, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং সশস্ত্র সংঘাতের কারণে বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আমেরিকান নাগরিকদের ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, পাকিস্তানের প্রাক্তন ফেডারেলিভুক্ত ট্রাইবাল এরিয়া (FATA) এবং অন্যান্য অশান্ত অঞ্চলগুলোও উচ্চ সতর্কতায় চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ: দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিসের এক গবেষণায় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ১৬৩টি দেশের ওপর করা একটি জরিপের ফলাফলে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দিক থেকে এক গুরুতর অবস্থানে রয়েছে। সন্ত্রাসী সহিংসতা এবং সংঘাতের কারণে এই দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধী দৃষ্টিতে পড়ছে।
পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর চাপ
এছাড়া, পাকিস্তানে সম্প্রতি সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং বৈষম্যের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের দুটি শহরের পুলিশ শুক্রবার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ৪৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। করাচি পুলিশ জানিয়েছে যে, সুরজানি টাউন এলাকার একটি আহমদিয়া উপাসনালয়ে বিপুল সংখ্যক উগ্রপন্থী মুসলিম গুচ্ছিত হয়ে ওই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে এবং ২৫ জন আহমদিয়াকে আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে শিশুও ছিল। এই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ভ্রমণের ঝুঁকি
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার বিরোধীতার কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত, বিশেষত কাশ্মীরের অঞ্চলে, সশস্ত্র সংঘাত এবং সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়েছে। এর ফলে, মার্কিন নাগরিকদের জন্য এই এলাকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি
পাকিস্তানে সন্ত্রাসী সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মার্কিন সরকারসহ অন্যান্য দেশও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে এই অঞ্চলে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিচ্ছে। বিশেষত, মার্কিন কংগ্রেসে পাকিস্তান সম্পর্কিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তান ২০২১ সালের কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত আইএসআইএস সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করেছে, যার ফলে ১৩ জন মার্কিন সেনা সদস্যসহ প্রায় ১৭০ জন আফগান নাগরিক নিহত হয়েছিল।
ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি
এই সতর্কবার্তা মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার দিক থেকে একটি বড় সংকেত। পাকিস্তান বর্তমানে নিরাপত্তার দিক থেকে এক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সন্ত্রাসবাদ, সশস্ত্র সংঘাত, এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা দেশটির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত পাকিস্তানে মানবাধিকার এবং শান্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয় এবং পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।