দুই রাজ্যে ভোটার কার্ডধারীদের গ্রেপ্তার এবং বহিরাগত ক্রিমিনাল মুক্ত বাংলার দাবিতে কলকাতার এক্সাইড মোড় থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত বিশাল মিছিল করল বাংলা পক্ষ (Bangla Pokkho)। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এই মিছিল জনজোয়ারে পরিণত হয়। বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আয়োজিত এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কৌশিক মাইতি সহ সংগঠনের অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
প্রধান দাবি ও বক্তব্য
বাংলা পক্ষের দাবি, বাংলার ভোটার তালিকা শুদ্ধ করা হোক এবং যাদের দুটি রাজ্যে ভোটার কার্ড রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হোক। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাংলার চাকরি, ব্যবসা ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছে, এখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সহ অনেকে সেটাই বলছেন। বহিরাগত ক্রিমিনালদের বাংলা থেকে সরাতেই হবে।”
সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন, “বাংলা পক্ষ বাঙালির স্বার্থরক্ষার এ টিম। বহিরাগত ক্রিমিনালদের সংখ্যা বাড়লে চাকরি, ব্যবসা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। ভোটার তালিকা শুদ্ধ করাই একমাত্র সমাধান।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
বাংলা পক্ষের এই দাবির বাস্তবায়ন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দিভাষী, বিশেষ করে বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে আসা বহু মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন এবং এখানকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যদি এই দাবি কার্যকর করা হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো বড় সংকটে পড়তে পারে, কারণ এই জনগোষ্ঠী ভোট ব্যাংকের একটি বড় অংশ।
একই দেশের নাগরিক হিসেবে যে কেউ যেকোনো রাজ্যে বসবাস ও ভোটাধিকার পেতে পারেন। রইল বাকি দুই রাজ্যের ভোটার কি না! সেটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। অতএব, আইনত এই দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে নিজেদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, যা বাংলার ভোট রাজনীতিকে আরও বিভক্ত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা এও মনে করছেন,যে বাংলা পক্ষের এই আন্দোলন একদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে উজ্জীবিত করতে পারে, অন্যদিকে এর বাস্তবায়ন কঠিন হবে, কারণ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আইনগত জটিলতা এবং ভোট ব্যালান্সের হিসাব-নিকাশ। রাজনৈতিক মহলে ধারণা, বাংলা পক্ষের এই আন্দোলন আসন্ন নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
আজ বাংলা পক্ষের মহামিছিল বহিরাগত ও ভুয়ো ভোটার ইস্যুকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। তবে, একই দেশের নাগরিকদের রাজ্য থেকে বিতাড়নের প্রশ্নটি সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রশাসনের পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।