নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির আইন প্রত্যাহারের দাবি জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি তোলেন তিনি।
মমতা জানান, “বিএসএফ ইস্যুতে আমাদের সাথে কথা হয়েছে, আমি বলেছি, ভারতে একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো শক্তিশালী হওয়া দরকার। বিএসএফ আমাদের শত্রু নয়। আমি প্রত্যেকটি এজেন্সি কে সম্মান করি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সেখানে বিএসএফকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটতে পারে। আপনারা দেখেছেন যে বিএসএফ আমাদের ওখানে গুলি চালিয়ে দিয়েছে। তিন চারদিন আগে বিএসএফের গুলিতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে, কখনো উত্তরদিনাজপুর, কখনো দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর 24 পরগনাতেও সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই জন্য আমরা জানিয়েছি, তারা সীমান্ত শক্তিশালী করতে পারে। রাজ্যের কাছে যদি কিছু সাহায্য চায় আমরা সেটাও দিতে প্রস্তুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ডিস্টার্ব করা ঠিক নয়। এই বিষয়ে আপনারা আলোচনা করুন। সীমান্তে বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি করা নিয়ে যে আইন করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করুন। এটা নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি।”
চারদিনের সফরে গত সোমবার দিল্লিতে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বুধবার বিকেল পাঁচটায় দিল্লির সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে শুরু হয় মোদি-মমতার এই বৈঠক। বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের এলাকা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ। দিল্লিতে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সে কথা জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পাঞ্জাবের ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৫ কিলোমিটারের জায়গায় ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। ওই আইনের বিরোধিতা সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাবও পাস হয়। আর এদিন মোদির সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতে সরাসরি ওই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
মোদি মমতার এই বৈঠকের কোভিড পরিস্তিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে যেখানে ১২ থেকে ২১ বছর বয়সী বাচ্চাদের ভ্যাকসিন নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাও তিনি জানতে চান। এছাড়া জুট শিল্প চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মমতা আর্জি জানান এবং প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জানিয়েছেন।
আগামী বছরের এপ্রিল মাসে রাজ্যে হতে চলা বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান মমতা। প্রধানমন্ত্রীও সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন বলে জানান মমতা।
মমতা বলেন “যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্কে তার কোন প্রভাব যাতে না পরে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ, রাজ্যের উন্নয়ন হলে কেন্দ্রের উন্নয়ন সম্ভব, আর সেই কারণেই আগামী বছরের ২০-২১ এপ্রিল কলকাতায় যে বিশ্ববাংলা সম্মেলন হতে চলেছে সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।”
তবে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই এদিন বিকালে মমতার সঙ্গে বিজেপি সাংসদ সুব্রমনিয়ম স্বামীর সাক্ষাৎ যথেষ্ট তাৎপর্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। দিল্লীতে মমতার ১৮৩ নম্বর সাউথ এভিনিউর বাড়িতে আসেন স্বামী। প্রায় ৪৬ মিনিট ধরে দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে স্বামী জানান তিনি মমতার পাশেই আছেন। তার দল বদল করার কোন প্রয়োজন নেই। যদিও বিজেপি সংসদ সদস্যই এই মন্তব্য তার দলবলের জল্পনায় উসকে দিয়েছে।
অন্যদিকে সুব্রামনিয়াম স্বামীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, তিনি একজন বিজেপির সিনিয়র সংসদ। তিনি যদি আমার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে কি সেটা খুব খারাপ বিষয়? আমাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু বিরোধীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটাই আমাদের গণতন্ত্র।”
সম্প্রতি ত্রিপুরা পুর ভোটের আগে যে রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও আলোচনা হয় মমতা- মোদির বৈঠকে।