প্রতারণার নতুন কৌশলে একেবারে পথে বসেছেন গোলপার্কের বাসিন্দা শুভাশিস রায় ও তাঁর স্ত্রী চন্দ্রা রায় (Digital Arrest)। কোভিডের ধাক্কায় চাকরি হারানোর পর সঞ্চয়ের সুদে কোনওমতে সংসার চলছিল তাঁদের (Digital Arrest)। কিন্তু একটি ভুয়ো ফোনকল ও ‘ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট’-এর (Digital Arrest) ফাঁদে পড়ে হারালেন প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা।
শুভাশিসবাবু, একসময় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী, ২০২১ সালে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। একদিন আচমকাই তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দাবি করা হয়, এটি এসবিআইয়ের দিল্লি হেডকোয়ার্টার থেকে করা হয়েছে। জানানো হয়, তাঁর নামে একটি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু হয়েছে এবং তাতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। শুভাশিসবাবু এমন কোনও কার্ড নেননি বলে জানালে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ফোন লাইন ট্রান্সফার করার পর ভিডিয়ো কলে দিল্লি পুলিশের পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখানো হয়। সেখান থেকে শুভাশিসবাবুকে জানানো হয়, তাঁর নামে ইডি-র অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। ভয়ে তিনি আধার কার্ডের ছবি পাঠিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর ইডি-র নামে ভুয়ো নোটিস আসে, যেখানে বলা হয় তিনি ২.৫ কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত।
পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভয় পেয়ে শুভাশিসবাবু ও তাঁর স্ত্রী ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ভুয়ো নোটিস পাঠিয়ে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আরটিজিএস করতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে শুভাশিসবাবু গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সাইবার সেলে এফআইআর রেজিস্টার করা হয়। কলকাতা সাইবার সেল ইতিমধ্যেই সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে, তবে বাকি সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকার কোনও হদিস মেলেনি।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা এড়াতে অপরিচিত ফোন কল বা মেসেজে ব্যক্তিগত তথ্য বা ব্যাংকের তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুভাশিসবাবুর ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, প্রযুক্তির যুগে প্রতারণার ফাঁদ কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। সচেতনতা এবং সতর্কতাই এই ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।