কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দমদম সফরের সভাতেও আমন্ত্রণ পেলেন না বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকেই আশা করেছিলেন যে, দলে দিলীপ ঘোষের গুরুত্ব ফিরবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে দিলীপ ঘোষ নিজেই নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁকে কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই ঘটনা আবারও বিজেপির অন্দরে ‘নব্য-পুরনো’ দ্বন্দ্বের জল্পনা বাড়িয়ে দিল।
দিলীপের স্পষ্ট বার্তা:
আগামীকাল, ২২শে আগস্ট, প্রধানমন্ত্রী মোদি কলকাতা মেট্রোর উদ্বোধনের পর দমদমে একটি জনসভা করবেন। এই সভা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল—দিলীপ ঘোষ কি এবার আমন্ত্রণ পেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর আজ নিজেই দিলেন দিলীপ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তাই যেতেও পারি, নাও যেতে পারি। আমি কোথায় যাব, আমিই ঠিক করব।” যদিও এরপরই তিনি সংযোজন করেন যে দলের নির্দেশ মেনে তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন। এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হলেও সরাসরি কোনো বিদ্রোহের পথে হাঁটতে চাইছেন না।
বিতর্কের সূত্রপাত:
বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের কোণঠাসা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। যে নেতার হাত ধরে বাংলায় বিজেপির উত্থান, সেই দিলীপ ঘোষকে গত কয়েক মাসে মোদি এবং শাহের বিভিন্ন বঙ্গ সফরেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যা নিয়ে দলের অন্দরে এবং বাইরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো স্পষ্টতই দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে প্রকট করেছে। দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরানোর পর তাঁর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এমনকি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে থাকলেও তাঁর প্রভাব আগের মতো নেই বলেই মত অনেকের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
শমীক ভট্টাচার্য নতুন রাজ্য সভাপতি হওয়ায় মনে করা হয়েছিল যে, তিনি দিলীপ ঘোষের মতো পুরনো এবং প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলবেন। কিন্তু মোদির দমদমের সভাতেও দিলীপের অনুপস্থিতি সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করল। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্ভবত এখনো দিলীপ ঘোষকে আগের মতো গুরুত্ব দিতে নারাজ। এর পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক অবস্থান এবং দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তার স্পষ্টবাদী মনোভাব দলের একাংশের কাছে অস্বস্তিকর। দ্বিতীয়ত, নতুন নেতৃত্ব দলকে নতুনভাবে সাজাতে চাইছে, যেখানে দিলীপ ঘোষের মতো ‘পুরনো’ নেতাদের ভূমিকা সীমিত করা হচ্ছে।
তবে এই ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের জন্য শুভ সংকেত নয়, তা বলাই বাহুল্য। দিলীপ ঘোষের মতো জনপ্রিয় এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন নেতাকে বাদ দিয়ে বিজেপি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।