পশ্চিমবঙ্গে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ নিয়ে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপি। এই নিয়ে দুই দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে (Election Commission) গিয়ে নিজেদের অবস্থান পেশ করেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে সুকান্ত মজুমদার, শমীক ভট্টাচার্য, জগন্নাথ সরকার, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, খগেন মুর্মু, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সহ একাধিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন, অপরদিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ ব্রায়েন ও অন্যান্য নেতারা।
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ:
নির্বাচন কমিশন থেকে বেরনোর পর সুকান্ত মজুমদার তীব্র ভাষায় অভিযোগ করেন, “পশ্চিমবঙ্গে সিইও (Chief Electoral Officer) অফিস রয়েছে, যা মূলত তৃণমূলের দ্বিতীয় অফিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পকেটের অফিসাররা কাজ করেন। ওই অফিসের অধীনে বিডিও, এসডিও, এমনকি চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও রয়েছেন, যারা ভোটারদের ডুপ্লিকেট নাম ঢুকিয়ে ভোটার তালিকা কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন।”
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ৭,২৩৫টি ভোটার কার্ডের এপিক নম্বর এক, যদিও এই সব ভোটারের পরিচয় আলাদা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে জলঘোলা করা হলেও কমিশনকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি। একই এপিক নম্বর একাধিক বুথে অ্যাসাইন করা হতে পারে না এবং ডাবল এন্ট্রির সংখ্যা ১৩ লক্ষ। নির্বাচনের সময় বাংলায় হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়, এবং অন্য রাজ্যে যেখানে ভোটার লিস্ট সংশোধন করা সম্ভব, সেখানে বাংলায় তা সম্ভব হচ্ছে না।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য:
এদিকে, তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও নির্বাচন কমিশনের কাছে একই ইস্যু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনে আমরা এপিক কার্ডের বিষয়টি তুলেছি। পশ্চিমবঙ্গে এক নম্বরের এপিক কার্ডের মধ্যে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তর প্রদেশের নম্বর রয়েছে। এটি অবৈধ এবং অস্বাভাবিক। এক নম্বরের সঙ্গে একাধিক রাজ্যে এপিক কার্ডের নম্বর থাকতে পারে না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “কমিশনের বক্তব্যে আমি সন্তুষ্ট নই। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এক নম্বরের এপিক কার্ড তিনটি জেলায় রয়েছে, এবং এসব জেলায় বিজেপি সাংসদরা নির্বাচিত। এটি একটি গুরুতর ব্যাপার এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকার সমস্যা নয়, নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সময়সীমা বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে, কিন্তু প্রথমে ডুপ্লিকেট এপিক কার্ডের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। কমিশন বলছে, তারা একসঙ্গে কাজ করবে, কিন্তু তাদের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।”
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা:
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগগুলির প্রতি গুরুত্ব সহকারে নজর রাখবে এবং ভোটার তালিকায় যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তবে, কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়নি।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আরও বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, যা রাজ্যের ভোটারের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
উল্লেখ্য, ভুয়ো ভোটার বা ডুপ্লিকেট এপিক নম্বরের ইস্যু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে একে অপরের অভিযোগের কারণে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কমিশন এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় এবং আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।