নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার প্রায়ই নিজেদের কৃষি নীতি (Farmers Act) নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও কৃষকদের কল্যানে তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাইয়ে দিতে অটুট।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ২০২০ সালে তিনটি কৃষি আইনের (Farmers Act) প্রবর্তন। যার বিরুদ্ধে সারাদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিশেষ করে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায়।
সমালোচকরা সরকারকে কৃষক বিরোধী তকমা লাগিয়ে বলে এটি কৃষি সম্প্রদায়ের ব্যয়ে কর্পোরেট স্বার্থের জন্য পান্ডারিং করার অভিযোগ করেছে। যাইহোক, কৃষকদের জীবন ও জীবিকা উন্নত করার লক্ষ্যে সাতটি বড় প্রকল্পের সাম্প্রতিক অনুমোদনের সাথে, সরকারকে ঘিরে থাকা কৃষক বিরোধী আখ্যান অবশ্যই ভেঙে পড়ছে। তাই অনেকেই বলছেন, এতেই বোঝা যায় কৃষকদের জন্য কেন্দ্র কতটা উদ্বিগ্ন।
কৃষি আইন বিতর্ক: ভুল বোঝাবুঝি নাকি ভুল বোঝানো?
কৃষকদের আরও শক্তিশালী করতে এবং তাঁদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সরকার তিনটি কৃষি আইন এনেছিল। সেই আইনের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নির্ধারিত এপিএমসি (APMC) বাজারের বাইরেও বিক্রি করতে পারবে, চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজ করতে পারবে এবং একইসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুত রাখার যে মাত্রা ছিল সেটাকেও তুলে নেওয়া হয়েছিল। এই আইন সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকেরা যাতে বাজারে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে এবং দামের ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা পায়। তবে এই আইন ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ে। এবং মনে করা হয়েছিল যে, এর ফলে কৃষকেরা তাঁদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এমএসপি (MSP) পাবেন না। এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাতে তাঁদের বিক্রি হয়ে যেতে হবে।
কৃষক বিরোধী আন্দোলনের তকমা দিয়ে তীব্র বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত ছিল এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে এমনভাবে, যা দেখে মনে হয়েছে কেন্দ্রের সরকার কৃষি এবং কৃষক বিরোধী। বিরোধীদল গুলি এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে বিজেপিকে বারবার আক্রমণ করেছে। বিরোধী দলের এই প্রচারের মুখে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়ে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ওই কৃষি আইন গুলি প্রত্যাহার করেন। ফলে একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছিল – কীভাবে বিরোধীদের প্রচার জনমানসে প্রভাব ফেলেছে যে সরকারকে তাঁদের আইন প্রত্যাহার করতে হল।
নতুন উদ্যোগ: একটি পরিষ্কার-কৃষক-সমর্থক এজেন্ডা
কৃষি আইনে (Farmers Act) বাধা সত্ত্বেও, মোদি সরকার কৃষকদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রেখেছে, তার প্রমাণ ১৩হাজার,৯৬৬ কোটি টাকা ব্যয় সহ এই সাতটি নতুন প্রকল্প। এর মাধ্যমে বোঝা যায় কৃষিক্ষেত্রে যে বিপুল চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মুখোমুখি হয়ে সমাধান করতে কেন্দ্রের সরকার কতটা তৎপর। ফলে আবহাওয়া, সেচ থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগতভাবে কৃষিকে কীভাবে আরও লাভবান ও ভরসাযোগ্য করে তোলা যায় তা কেন্দ্রের সরকার চেষ্টা করে চলেছে এবং এটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ মোদি সরকারের।
ডিজিটাল কৃষি মিশন
এইসব উদ্যোগের মূলে রয়েছে ডিজিটাল কৃষি মিশন। তাতে ২হাজার ৮১৭ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে। এই মিশনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। কৃষি পণ্য মজুত, কৃষি উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ ও মজুত করা, কৃষক রেজিস্ট্রি, গ্রামের জমি মানচিত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কৃষিকাজকে আরও উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ক্রেতাদের সাথে কৃষকদের সরাসরি সংযুক্ত করার মাধ্যমে মধ্যসত্ত্বাভোগীদের সরিয়ে লাভের গুড় কৃষকের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর সরকার।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য শস্য বিজ্ঞান
খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা সংক্রান্ত শস্য বিজ্ঞান প্রকল্পে ৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা জোরদার হবে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার ফলে যে সমস্যায় কৃষকেরা পড়েন তা সামাল দিতে এই প্রকল্প সাহায্য করবে। একইসঙ্গে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে নানাবিধ সাহায্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতের খাদ্য সুরক্ষাকেও এই প্রকল্প সুনিশ্চিত করবে।
কৃষি শিক্ষা ও প্রাণিসম্পদ স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করা
কৃষিকাজে পশুসম্পদের গুরুত্ব অনেক। সেটা বুঝতে পেরেই সরকার ২হাজার ২৯১ কোটি টাকা কৃষি শিক্ষা, ম্যানেজমেন্ট ও সামাজিক বিজ্ঞানে বরাদ্দ করেছে। এছাড়া ১হাজার ৭০২ কোটি টাকা পশু সম্পদের স্বাস্থ্য ও উৎপাদন প্রকল্পে বরাদ্দ করেছে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্মের কৃষি ক্ষেত্রের পেশাদাররা আরও আধুনিক জ্ঞান ও স্কিল নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এবং ভারতের কৃষিক্ষেত্র নির্ভরযোগ্য পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
হর্টিকালচার উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার
কৃষকদের আয়ের একাধিক পথ তৈরির প্রচেষ্টা করছে সরকার। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সেই উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়েছে। হর্টিকালচার প্রকল্পে ৮৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষকদের নানাবিধ চাষে উৎসাহিত করে আয় বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য। একইসঙ্গে ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কৃষকদের জন্য ১হাজার ১১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকারের পরিবেশকে বাঁচিয়ে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসের ভাবনাও সুষ্পষ্ট হয়েছে।
যাতে করে সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়।
বিজেপি কৃষক বিরোধী : এই প্রচার মুখ থুবড়ে পড়েছে
সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রকল্পগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা বিরোধীদের প্রচারের বেলুনকে চুপসে দিয়েছে। মোদী সরকার যে কৃষক বিরোধী নয় তা প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার যে কৃষকদের জীবনের সার্বিক মানোন্নয়নের সচেষ্ট তাও স্পষ্ট হয়েছে। কৃষক আইন নিয়ে বিক্ষোভ সাময়িকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেও, প্রকৃতপক্ষে নতুন প্রকল্পগুলি দীর্ঘমেয়াদিভাবে বিজেপিকে কৃষক দরদী বলে চিহ্নিত করবে।