বাংলাদেশের জেলে দু’মাস বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ভারতের মৎস্যজীবীরা (Fishermen)। সোমবার গঙ্গাসাগরের সভায় তাঁদের (Fishermen) সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তাঁদের (Fishermen) প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। সেই সঙ্গে অভিযোগ করেন, বন্দিদশায় বাংলাদেশের জেলে তাঁদের (Fishermen) মারধর করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সীমানা অতিক্রম করায় পরিস্থিতির শিকার হন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের কয়েকজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, “দেখলাম কেউ কেউ খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। তাঁরা বলতে চাইছিলেন না। পরে জানতে পারি, তাদের কয়েকজনকে মোটা লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। হাত দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট পেয়েছেন।” তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। মমতা আরও বলেন, “আমাদের মৎস্যজীবীদের সতর্ক থাকতে হবে। সীমানার বাইরে গেলে বিপদ হতে পারে। মাছ না উঠলেও জীবনটা আগে রক্ষা করতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, একমাস আগে একটি বাংলাদেশি ট্রলারে অসুস্থ অবস্থায় মৎস্যজীবীরা ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়েছিলেন। তাঁদের চিকিৎসা ও যত্নের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি বলেন, “আমরা চাই, দুই দেশ মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক। আমরা মানবিক আচরণ করেছি এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারকেও জানিয়েছি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মৎস্যজীবীদের জন্য রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। সমুদ্রসাথী প্রকল্পে প্রায় ২ লাখ মৎস্যজীবী উপকৃত হবেন। মৎস্যজীবী বন্ধু প্রকল্পে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মৎস্যজীবীদের ১০০০ টাকা করে পেনশন দেওয়া হচ্ছে। আহত মৎস্যজীবীদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গঙ্গাসাগর মেলার প্রসঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন মমতা। তিনি বলেন, “কুম্ভ মেলায় কেন্দ্র হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। অথচ গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করার দাবি বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, মুড়িগঙ্গার উপর একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যার টেন্ডার ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। “প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। দু’তিন বছরের মধ্যে এটি তৈরি হলে তীর্থযাত্রীদের সুবিধা হবে।”
গঙ্গাসাগর মেলার জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, ৯ থেকে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে গঙ্গাসাগরে কেউ মারা গেলে ৫ লাখ টাকার বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে স্পষ্ট, মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা ও গঙ্গাসাগর মেলার উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা নিয়ে তার ক্ষোভও প্রকাশিত হয়েছে।