একটি অসাধারণ সাফল্যের মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেট দল তাদের নাম ইতিহাসের (Indian Team Creates History) পাতায় লিখে ফেলল। ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে ভারত প্রথমবারের মতো পরপর দুটি আইসিসি ট্রফি জয়ের গৌরব অর্জন করল। এই অসাধারণ সাফল্যটি আসে ২০২৪ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর, এবং ভারত প্রথম দেশ হিসেবে পরপর দুইটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জয় করার রেকর্ড গড়ল।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য
রোহিত শর্মা-এর নেতৃত্বে ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের ২৯ জুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর, এবার ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করল ভারত। এই সাফল্য আরও বিশেষ কারণ, ভারতই প্রথম দল হিসেবে দুইটি পরপর আইসিসি ট্রফি জয়ের রেকর্ড তৈরি করল, যা এখন পর্যন্ত কোনও দেশের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
ভারতের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছেন রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলি, এবং রবীন্দ্র জাদেজা-এর মতো বড় নাম। যেখানে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দল কৌশলগতভাবে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছিল, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারতের সর্বাঙ্গীন দক্ষতা এবং ক্রিকেটের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে।
আইসিসি ফাইনালে ভারতের গ্লোবাল আধিপত্য
ভারতীয় দলের আইসিসি টুর্নামেন্টের জয়গুলি শুধু ঐতিহাসিকই নয়, বরং তারা প্রতিটি মহাদেশের দলের বিরুদ্ধে ফাইনালে জয় লাভ করেছে। ভারতের এই রেকর্ডটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে:
- ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (আমেরিকা মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
- ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: পাকিস্তান (এশিয়া মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
- ২০১১ সালের বিশ্বকাপ: শ্রীলঙ্কা (এশিয়া মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
- ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি: ইংল্যান্ড (ইউরোপ মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
- ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: দক্ষিণ আফ্রিকা (আফ্রিকা মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
- ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি: নিউজিল্যান্ড (ওশেনিয়া মহাদেশ) কে হারিয়েছে।
ভারতের বলিংয়ে আধিপত্য
ভারতের বলিং আক্রমণ, বিশেষত স্পিনাররা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের জয়কে নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে ২৫২ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। যদিও এক সময় মনে হচ্ছিল তারা ৩০০ রানের কাছাকাছি পৌঁছাবে, কিন্তু ভারতের স্পিনারদের আগ্রাসী বোলিংয়ে কিউইরা বেশ চাপে পড়ে।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ড্যারিল মিচেল ৬৩ রান করেন, তবে তিনি ১০১টি বল খেলেছিলেন। এরপর মাইকেল ব্রেসওয়েল শেষদিকে ৪০ বলে ৫৩ রান করেন। তবে ভারতীয় স্পিনাররা তাঁদের লক্ষ্য অর্জন করতে দিল না।
- বরুণ চক্রবর্তী ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।
- কুলদীপ যাদব ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।
- রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন।
- অক্ষর প্যাটেল ৮ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়েছেন, যদিও কোনও উইকেট পাননি।
পেস আক্রমণে, মোহাম্মদ শামি ৯ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন, এবং হার্দিক পান্ডিয়া ৩ ওভারে ৩০ রান দেন।
ভারতের রান তাড়া: চ্যালেঞ্জিং শুরু, কিন্তু ঐতিহাসিক শেষ
ভারতের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। রোহিত শর্মা দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। তিনি দলের ইনিংসটি এগিয়ে নিয়ে যান, কিন্তু শুভমন গিল কিছুটা চাপে পড়েছিলেন। রোহিত একাই দলের রান তুলে যাচ্ছিলেন। তাঁরা ফাইনালে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রান গড়েছিলেন। রোহিত অর্ধশতরান পূর্ণ করেন এবং ভারত বিনা উইকেটে ১০০ রান ছুঁয়ে ফেলেছিল।
কিন্তু ম্যাচে মোড় ঘুরে যায় ১৯ তম ওভারে যখন গ্লেন ফিলিপস একটি অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে শুভমন গিল-কে আউট করেন। এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ভারত।
- রোহিত শর্মা ৭৬ রান করে আউট হন।
- ভিরাট কোহলি মাত্র ১ রান করে আউট হন।
- মধ্যক্রমিকদের মধ্যে শ্রেয়স আইয়ার এবং অক্ষর প্যাটেল দলের সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও নিউজিল্যান্ড একাধিক সুযোগ তৈরি করে।
যখন মনে হচ্ছিল ভারত ম্যাচটি সহজেই জিতবে, তখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত ছয় বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে জয়ী হয়।
ভারতীয় ক্রিকেটে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত
২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলের জয় একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। পরপর দুটি আইসিসি ট্রফি জিতে ভারতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। রোহিত শর্মা-এর নেতৃত্ব, এবং ভিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, ও কুলদীপ যাদব-এর অসাধারণ পারফরম্যান্স ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে শীর্ষে পৌঁছানোর পথে নিয়ে এসেছে।
এই সাফল্য কেবলমাত্র ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে একটি মাইলফলকই নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ভারতীয় ক্রিকেট দল আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা দলের তালিকায় অবস্থান করছে, এবং তাদের এই ঐতিহাসিক যাত্রা ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য অর্জনের পথ খুলে দিয়েছে।