Aerobic Gymnastics: জাতীয় স্তরে জোড়া স্বর্ণ পদক পেয়েও টাকার অভাবে অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্সের বিশ্বকাপে যেতে পারবে না মাজিদা

Aerobic Gymnastics Player Majida Khatun

জম্মু কাশ্মীরে আয়োজিত অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্সের (Aerobic Gymnastics) ন্যাশনাল ইভেন্টে ট্রায়ো, ইন্ডিভিজ্যুয়াল আর গ্রুপ ইভেন্টে স্বর্ণ পদক। জাতীয় স্তরে এই তিনটি স্বর্ণপদক জয়ের পর……

জম্মু কাশ্মীরে আয়োজিত অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্সের (Aerobic Gymnastics) ন্যাশনাল ইভেন্টে ট্রায়ো, ইন্ডিভিজ্যুয়াল আর গ্রুপ ইভেন্টে স্বর্ণ পদক। জাতীয় স্তরে এই তিনটি স্বর্ণপদক জয়ের পর এবার এশিয়া ও বিশ্ব চ্যাম্পিনশিপে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন খড়গপুরের মেয়ে বছর সতেরোর মাজিদা খাতুন। আগামী মে মাসে জাপানে বসবে অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্সের বিশ্বকাপের আসর। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসবে জুনে, ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে। কিন্তু, এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মাজিদা যোগ দিতে পারবে কিনা, সেটাই এখন প্রশ্নের মুখে। এই আশঙ্কার কালো মেঘ জমার কারণ মজিদার আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

খড়গপুরের খুবই সাধারণ পরিবারের মেয়ে মাজিদা খাতুন। ২০১৮ সাল থেকে মাজিদা নৈহাটির পঞ্চানন তলার নিউ অ্যাথলেটিক ক্লাবে কোচ সম্রাট পালের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু, স্কুলের পড়াশোনা সামলে নিয়মিত খড়গপুর থেকে নৈহাটি যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছিল মজিদার। এর সঙ্গে ছিল আর্থিক অনটন। তাই, নিজের মাকে নিয়ে প্রশিক্ষক সম্রাট পালের বাড়িতেই থাকেন মাজিদা। আর, পাশের পঞ্চানন তলার নিউ অ্যাথলেটিক ক্লাবে চলছে মাজিদার সকাল বিকেল ট্রেনিং। এই ক্লাবে সম্রাট স্যারের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েই মাজিদা গত মার্চে ২২ থেকে ২৪ তারিখে জম্বু কাশ্মীরে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ইন্ডিভিজ্যুয়াল ওমেন ট্রায়োতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্বর্ণ পদক জয় করে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন মাজিদা।

গোপালী ইন্দ্র নারায়ণ মেমোরি হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মাজিদা খাতুন। পাশে দাঁড়িয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তিনি মাজিদাকে বলেই দিয়েছেন, ‘তুমি প্র্যাকটিস করো, যখন তোমার পরীক্ষা বা প্রজেক্ট জমা দেওয়ার সময় আসবে, তখন আমরা তোমাকে ইনফর্ম করে দেব।’ প্রধান শিক্ষিকার আশ্বাসে নিজেকে অনুশীলনে ব্যস্ত রাখতে পেরেছে মাজিদা।

কোচ সম্রাট পালের কাছ থেকে ততটাই সাহায্য পেয়ে থাকেন মাজিদা। মজিদার মতো ৩৬ জন খেলোয়াড়কে নিজের বাড়িতেই থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কোচ সম্রাট পাল। সবার জন্য রান্নাবান্না করেন মাজিদার মা। পরীক্ষার সময় প্র্যাকটিসের বাঁধাধরা সময় যখন থাকে না, তখনও রাত হোক বা দুপুর, যেকোনো সময়ে কোচের বাড়ির দরজা মাজিদার জন্য খোলা থাকত। ততটাই ভরসা রাখেন নিজের ছাত্রী মাজিদার ওপর কোচ সম্রাট পাল। মাজিদা তার কাছে প্র্যাকটিসে আসার তৃতীয় দিনেই মাজিদার মাকে তিনি বলে দিয়েছিলেন, মাজিদা একদিন দেশের হয়ে খেলবে। কোচ সম্রাট পালের কাছে ট্রেনিং নিয়েই ন্যাশানাল রেকর্ড করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মজিদা। এবার আন্তর্জাতিক পদকের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কোচ সম্রাট পালের কথায়, ‘আগেও ও (মাজিদা) ইন্টারন্যাশনাল খেলেছে, কিন্তু এবার আমরা আশা করছি ও ইন্টারন্যাশনাল থেকে পদক নিয়ে আসবে। ভিয়েতনামে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে, আমিও টিমের কোচ হিসেবে থাকব। এবার আমাদের করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে সিচ্যুয়েশন, আমরা লড়ে ওখান থেকে জিতে একটা মেডেল নিয়ে আসব।’

কোচ সম্রাট পালকে নিয়ে নিজের গর্বের কথা জানালেন পঞ্চানন তলা অ্যাথেলেটিক ক্লাবের অন্যতম সদস্য স্মরজিৎ কুমার মোদক। পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় কোচিং করিয়ে যেভাবে মাজিদার মতো প্রতিভা তুলে আনছেন, তাতে গর্বিত তিনি।

পঞ্চানন তলা অ্যাথেলেটিক ক্লাবের ইন্ডোর কমপ্লেক্সে প্রতিদিন দুইবেলা অন্তত ৪ ঘণ্টা করে মোট ৮ ঘণ্টা অনুশীলন করছেন মাজিদা। আগামী ২৫ থেকে ২৬ শে মে জাপানে বসবে অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্সের বিশ্বকাপের আসর। জুন মাসের ৮ তারিখ থেকে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহরে বসবে ২০২৪ সালের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। কিন্তু, অর্থের অভাব এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগদানে মাজিদার এখন সবথেকে বড় বাঁধা। জাপানে বিশ্বকাপে যোগ দেওয়ার জন্য সুজুকিই স্পনসর করছে, কিন্তু নিজের খরচেই ভিয়েতনামে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যেতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছে মাজিদা।

কোচ ও ক্লাবের কাছ থেকে প্রভূত পাওয়ার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করলেন মাজিদা। কোচ সম্রাট পাল ও সৌভিক দাসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন। এদের সবার জন্য সোনার পদক জিতে দেশে ফিরতে চায় মাজিদা। নিজের মুখেই বললেন, এনারা সবাই তার জন্য খুবই চেষ্টা করছেন।’

কোচ সম্রাট পাল জানালেন, আর্থিক সমস্যাই এখন একটা বাঁধা। কিন্তু রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে চিঠি দিয়েছেন, যাতে ভিয়েতনামে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে মাজিদার যোগদান সফল হয়। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা করছেন তারা। সম্রাট বাবুর কথায়, ট্রেনিংয়ের সুযোগ সুবিধার দিক থেকে বাংলা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবুও লড়াই থেমে নেই। ভিয়েতনামে উড়ে যাওয়ার আগে এক ইউরপিয়ান কোচের কাছে ৭ দিনের ট্রেনিং নেবে মাজিদা, জানালেন সম্রাট পাল। মাজিদার প্রপ্রার গাইডেন্স যদি থাকে তাহলে সুজুকি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে একটা সম্মানজনক স্কোর এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে একটা মেডেল নিয়েই মাজিদা বাড়ি ফিরবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সম্রাট বাবু।

আমাদের খবর এইসময় পরিবারের সকলের তরফ থেকে মাজিদার জন্য রইল শুভ কামনা।

Google news