India-Russia Relationship: রাশিয়া থেকে আসছে কয়লা বোঝাই ২টি ট্রেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে INSTC

কোভিডের সময় এবং তার পরেও ভারত রাশিয়ার (India-Russia Relationship) কাছ থেকে খুব সস্তায় জ্বালানি তেল কিনেছিল। ভারতের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব দেখা গিয়েছিল। যখন গোটা বিশ্ব জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে ভুগছিল, তখন রাশিয়া রপ্তানির সীমা অতিক্রম করে ভারতকে খুব কম দামে তেল সরবরাহ করেছিল। এখন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ ট্রেন চালানোর কথা চলছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই বিশেষ ট্রেনটি ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব এবং অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ করিডর ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই প্রথমবার এই করিডোর দিয়ে ভারতের দিকে আগত দুটি ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। উত্তর-দক্ষিণ আন্তর্জাতিক পরিবহন করিডোরের মাধ্যমে কুজবাস থেকে ভারতগামী দুটি ট্রেনই যাত্রা শুরু করেছে। রাশিয়ান রেলওয়ে দুটি ট্রেনের প্রস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

Iran announces completion of transport of Russian goods to India through  INSTC

এখন আমরা পুতিনের এই ট্রেন সম্পর্কে কথা বলব যা সরাসরি রাশিয়া থেকে ভারতে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্কো সফরের আগে ভারতকে উপহার পাঠিয়েছে রাশিয়া। হ্যাঁ, রাশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে ২টি ট্রেন ভারতে আসছে। দুটি ট্রেন রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে ইরান হয়ে মুম্বাই আসছে। এত দীর্ঘ যাত্রার পর এই প্রথম রাশিয়া থেকে কোনও ট্রেন ভারতে পৌঁছবে। এই রুটটি আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (আইএনএসটিসি) নামে পরিচিত। এখন আপনারা জানেন এই পথের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং কীভাবে এটি উভয় দেশের অর্থনীতির গৌরব বাড়িয়ে তুলবে।

INSTC UPSC Notes: International North-South Transport Corridor

INSTC প্রায় ৭২০০ কিলোমিটার একটি মাল্টি মোড নেটওয়ার্ক, যা রেল, রাস্তা এবং সমুদ্র রুট ব্যবহার করে। এটি মধ্য এশিয়ার মাধ্যমে ভারতকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে। রাশিয়া থেকে ট্রেনগুলি কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরানের চাবাহার বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ে পৌঁছবে। অর্থাৎ, যেখানে রেলপথ থাকবে, ট্রেন চলবে এবং যেখানে সমুদ্রপথ থাকবে, সেখানে সামুদ্রিক জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করা হবে।

INSTC ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে রাশিয়াকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে। ভারতের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া সামুদ্রিক বাণিজ্যে বিধিনিষেধের মুখোমুখি হওয়ায় এই করিডোরের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে, এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারত এটিকে চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিকল্প হিসাবে দেখছে।

গত মাসে, ভারত ১০ বছরের প্রাথমিক সময়ের জন্য ইরানের চাবাহার বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই চুক্তি INSTC-র জন্য উৎসাহব্যঞ্জক কারণ এই বন্দরটি INSTC-র মূল কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে। এই আঞ্চলিক সংযোগ মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানের স্থলবেষ্টিত দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যকে রূপান্তরিত করবে এবং একটি বিকল্প পথ প্রদান করবে যা এই অঞ্চলকে রাশিয়া এবং তারপর ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। INSTC ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আরও সহজে এবং আরও সাশ্রয়ী মূল্যে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ করতে সক্ষম করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে ইরান, রাশিয়া, আজারবাইজান এবং বাল্টিক ও নর্ডিক দেশগুলিতে ভারতের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পাবে।

Development of INSTC proceeds with Rasht – Astara and Azerbaijani terminal  | RailFreight.com

INSTC-কে সুয়েজ খাল বাণিজ্য পথের বিকল্প হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ, এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ৮টি প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিদিন খালের মধ্য দিয়ে যায়। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এই পথটিকে অনিরাপদ করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে INSTC করিডর একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারে, যার মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ভারত যদি INSTC-র মাধ্যমে চাবাহার বন্দরকে কাজে লাগাতে শুরু করে, তাহলে শক্তি, ওষুধ, তথ্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, কৃষি, বস্ত্র এবং রত্ন ও গহনা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।

এই নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের ১০টি দেশ। এটি অন্যান্য উপায়ের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ এটি সুয়েজ খাল পথের তুলনায় ৩০ শতাংশ সস্তা এবং ৪০ শতাংশ ছোট হবে। অর্থাৎ, যদি সুয়েজ খালে পৌঁছতে ১০ দিন সময় লাগে, তাহলে এই পথ থেকে মাত্র ৬ দিন সময় লাগবে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এই পথের ব্যবহার বাড়াতে চায়। এর মাধ্যমে ভারত সরাসরি মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে, এটি চাবাহারের ব্যবহারও বাড়িয়ে তুলবে, যার পরিচালনা বর্তমানে ভারতের হাতে রয়েছে।

Google news