Hoogly_ Kickboxing: অদম্য ইচ্ছে শক্তির কাছে হার অভাবের, স্বর্ণপদকের ঝলকানি এল হুগলীর এক অভাবের সংসারে

পল্লব হাজরা, বলাগড়: অদম্য ইচ্ছে শক্তির কাছে অভাব অনটন যেন ফিকে পরে যায়। কিক বক্সিং এ সোনা জয় করে এমনটাই প্রমাণ করলো হুগলী খামারগাছির, হরিষারপুল গ্রামের যুবক তারক ঘোষ।

গত আগস্ট মাসে চেন্নাই জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ওয়াকো ইন্ডিয়া ন্যাশনাল সিনিয়র এন্ড মাস্টার্স কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই প্রতিযোগিতায় -৫১ কেজি ফুল কন্টাক্ট ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলার যুবক তারক। প্রতিযোগিতায় দেশের প্রায় দেড় হাজার প্রতিদ্বন্দ্বি অংশ নেন যার মধ্যে এ রাজ্যে ছিল ৪১ জন। হিমাচল, মেঘালয় ও ছত্রিশগড়ের মতো রাজ্য থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়েরা রিং-এ মুখোমুখি হলে তাদের হেলায় হারিয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন হুগলির  বছর ২১ এর তারক।

স্বর্ণপদক প্রাপ্তিতে খুশি তারক সহ পরিবারের সকলে। তবে জয়ের পথটা স্বর্ণের মতো এতটা স্বর্ণোজ্জ্বল ছিল না। পথে নানান কঠিন ঘাত প্রতিঘাত বাঁধা পেরিয়ে এই সাফল্য আসে তার।

এই নিয়ে তারক ঘোষ বলেন বাবা পেশায় ট্রেনের হকার। লকডাউনের মুহূর্তে চরম অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে কেটেছে পরিবারের। বাধ্য হয়ে পড়াশোনার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। বাড়ির সামনে ছোট একটি দোকান খুলে নিজের উপার্জনের টাকায় প্রশিক্ষণ নেন।

ছেলের এই জয়ের প্রসঙ্গে মা দেবীকা ঘোষ বলেন ছেলে এক সময় না জানিয়েই অনুশীলন করত। পরবর্তী সময় তার প্রতিভার কথা জানতে পেরে উৎসাহ দিতে থাকেন। ভবিষ্যতে ঘরের ছেলে তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে এমনটাই ছিল তাদের বিশ্বাস।

তারকের বাবা শিবশংকর ঘোষ জানান তিনি ট্রেনের হকার, আয়ও সীমিত। সেই দিক থেকে তারককে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ভাবে সহায়তা পেলে তারকের যাত্রাপথ আরও মসৃণ হবে।

বিপদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার করার জন্য বরাবরই তার শখ ছিল কিক বক্সিং শেখার। তাছাড়া বিভিন্ন বক্সিং নিয়ে তৈরি সিনেমার উপর ছিল তার বাড়তি আকর্ষণ।সেই থেকে তার ঝোঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে এই খেলার প্রতি। শুরু হয় প্রশিক্ষণ নেওয়া। বাঁশবেড়িয়া মার্শাল আর্টস একাডেমি থেকে হাতে খড়ি। গৌরব গোস্বামী, মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম চক্রবর্তীর মতো প্রশিক্ষক পেয়ে একের পর এক  সাফল্য লাভ করে। ঝুলিতে আসতে থাকে একের পর এক পুরস্কার সহ পদক। অবশেষে চলতি বছরে দিঘায় কিক বক্সিং এসোসিয়েশন প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাড়ি দেন চেন্নাই। আর সেখানে থেকেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসে তারক। যদিও তারকের সাথে সাথে এই রাজ্যের আরও দুই জন খেলোয়াড় কিক বক্সিং-এ স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তারকের আশা ভবিষ্যতে অলিম্পিকে যাওয়ার। তাই অলিম্পিককে পাখির চোখ করে এগোতে চায় বছরের  একুশের তারক।

Google news