আবু আলী, ঢাকা: বেনাপোল বন্দরে ভয়াবহ পণ্যজটের বিরূপ প্রভাব পড়েতে শুরু করেছে আমদানি বাণিজ্যে। বন্দরের শেডগুলোতে ফাঁকা জায়গা না থাকায় কমে গেছে পণ্য আমদানি। ফলে, এবারও রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও, বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য রাখার জায়গা দিতে না পারার কারণে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বন্দরে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চারগুণ বেশি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বন্দরের ভিতরে জায়গার অভাবে পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ আমদানি বাড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে-পরে শুধুমাত্র ১০ দিন ভারত থেকে পণ্য এসেছে। বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য ডেলিভারি হয়নি। সরকারি বিধিনিষেধ, বর্ষা ও ফেরিঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বন্দর থেকে পণ্য খালাস না করায় পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্যজট কমাতে যে সব পণ্য চালান মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে, সেগুলো নিলামের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অনেকে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন, আবার অনেকে সময় চেয়ে আবেদন করছেন।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিদিন ট্রাক আটকে রেখে ডেমারেজের নাম করে হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। অতিরিক্ত চাঁদাবাজির টাকা গুনতে হচ্ছে বলেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘ভারত থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে। করোনার কারণে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০০ তে। করোনাকালে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের কথা থকলেও সকাল ১০টার আগে পাঠাতে পারছেন না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।’বন্দরের জায়গা সংকট ও যন্ত্রপাতি স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পণ্য ধারণক্ষমতা বেড়েছে। ২৫ একর জায়গা আমরা অধিগ্রহণ করেছি। আরও সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। শিগগির ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোলে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও বন্দরে কাজ কর্ম স্বাভাবিক আছে। বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসর জন্য সকল কর্মকর্তা ও স্টোক হোল্ডারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও দ্রুত করতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।’