ন্যাশনাল ডেস্ক: হিডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে আদানি ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। জেপিসির দাবি তুলেছেন বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। যেভাবে শিল্পপতি গৌতম আদানির নাম করে বিরোধীরা একজোট হচ্ছেন, তার প্রেক্ষিতে বাজেট অধিবেশনে বুধবার লোকসভার পর বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) মুখ খুলতেই বিরোধী সাংসদদের তরফে স্লোগান ওঠে, ‘মোদী আদানি ভাই ভাই’।
আদানি বিতর্কে সরাসরি মুখ না খুললেও এদিন বিরোদীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কারও কারও ভাষা, আচরণ ভারতের জন্য হতাশাজনক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত কাঁদা ছুঁড়বে, তত পদ্ম ফুটবে।’ অর্থাৎ আদানি ইস্যুতে বিরোধীরা যখন এককাট্টা, সেই সময় তাঁদের পালটা কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, হিন্দি কবিতার সারাংশ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিচড় উসকে পাস হ্যায়, মেরে পাস গুলাল। যো ভি জিসকে পাস থা উসনে দিয়া উছল।’
তবে বিরোধীদের চিৎকার, চেঁচামেচির মধ্যেই নিজের বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। গৌতম আদানির বিষয়ে তদন্ত করতে হবে, বিরোধীদের দাবিতে কান না দিয়ে মোদী সরকার কী কাজ করছে এবং পূর্বের কংগ্রেস সরকার কী করেছে, সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরতে শুরু করেন। মোদীজী এদিন বলেন, ‘গত ৩-৪ বছরে প্রায় ১১ কোটি বাড়িতে কল মারফৎ পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নের কথা বলে, আমরা জন ধন অ্যাকাউন্ট আন্দোলন শুরু করেছি। গত ৯ বছরে, সারা দেশে ৪৮ কোটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।’
আদিবাসীদের জন্য তাঁর সরকার যে পদক্ষেপ করেছে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন উপেক্ষিত ছিল। আমরা দেশের ১১০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষার জেলা চিহ্নিত করেছি। ক্রমাগত ফোকাস এবং কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার কারণে এই জেলাগুলিতে শিক্ষা, পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। এতে ৩ কোটিরও বেশি আদিবাসী উপকৃত হয়েছেন।’
‘আজাদি কা অমৃত কাল’-এর সময় দেশবাসীর উপকারের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা সমস্ত প্রকল্পগুলোর ১০০ শতাংশ সাফল্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং সমস্ত ধরণের তুষ্টিকরণের অবসান ঘটাব।’
দেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বিরোধীদের তোপ দেগে বলেছেন, ‘সরকার নীতি পরিবর্তন করায় ড্রোনগুলি সাধারণ মানুষের উপকারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিরুদ্ধে কারণ তারা দেশ নিয়ে মাথা ঘামায় না, তাদের চিন্তা শুধু রাজনীতি। আজ, ৩৫০টিরও বেশি বেসরকারি সংস্থা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের দেশ প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করছে। খুচরা বিক্রেতা থেকে পর্যটন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাভ বেড়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী মোদীর অভিযোগ, কেন্দ্রে থাকালীন কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৩৫৬ ধারার ‘অপব্যবহার’ করে ৯০ বার একাধিক রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করেছিল।
কংগ্রেসকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ‘কংগ্রেস বলত গরীবি হটাও। কিন্তু ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে কিছুই করেনি। আর আমরা দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে কঠোর পরিশ্রম করি। আমাদের অগ্রাধিকার হল সাধারণ জনগণ এবং এই কারণেই আমরা দেশের ২৫ কোটি পরিবারকে এলপিজি সংযোগ দিয়েছি।
আদানি ইস্যুতে বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে নিশানা করে মোদী বলেন, ‘খাড়গেজি অভিযোগ করেন যে আমি প্রায়শই কালাবুর্গিতে যাই। সেখানে কী কাজ হয়েছে সেগুলো তাঁর দেখা উচিত। কর্ণাটকে ১.৭০ কোটি জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে কালাবুর্গিতে 8 লক্ষেরও বেশি। যখন সাধারণ জনগণ ক্ষমতায়িত হচ্ছে, অনেকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং আমি তাদের কষ্ট বুঝতে পারছি।’