বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ (One Nation One Election) নীতি কার্যকর করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে অনুমান করা হচ্ছে, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এক দেশ এক ভোট নীতি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিল পাশ করতে পারে।
বৈপ্লবিক পদক্ষেপের দিকেই এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা দেশ জুড়ে একইসঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। কেন্দ্রে আরও একবার ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এনডিএ জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ (One Nation One Election) নীতি কার্যকরের লক্ষ্যে আরো সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। এবার বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে অনুমান করা হচ্ছে, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এক দেশ এক ভোট নীতি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিল পাশ করতে পারে।
গত বছর কেন্দ্রের মোদি সরকারের তরফে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ (One Nation One Election) নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশিকা খুঁজে বের করার জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই গত ১৪ই মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে এই রিপোর্ট জমা দেয় কোবিন্দ কমিটি।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যেরাও উপস্থিত ছিলেন। লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করানোর সুপারিশ করে কৈবিন্দ কমিটি আটটি ভাগে ১৮ হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে। যেমন, কোনো রাজ্যে বা কেন্দ্রে এই ‘এক দেশ এক ভোট’ (One Nation One Election) ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে পাঁচ বছরের আগে যদি কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচিত সরকার পড়ে যায়, তাহলে তখন কি করা হবে?
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় একই সঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট হলে যা বৈচিত্রের সম্ভাবনা আছে বিজেপির প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে বলে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সহ দেশের একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানাতে শুরু করেছে। তাদের কথায়, ‘মোদি সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী।’ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কা, লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা ভোট হলে বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের ফলে লোকসভার সেই জোয়ারে বিধানসভাগুলিও ভেসে যাবে।
এক দেশ এক ভোট নীতি কার্যকর করার পক্ষে মোদি সরকারের যুক্তি, এতে নির্বাচনের জন্য একদিকে যেমন খরচ কমবে, অন্যদিকে একটি ভোটার তালিকাতেই দুটি ভোট হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরীর কাজের চাপ কমবে। আর বারবার ভোটের জন্য আদর্শ আচরণবিধি তৈরির ফলে উন্নয়নমূলক কাজ আটকে যাবে না। এবার দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ (One Nation One Election) নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিল পাশ করার দিকে এগোনোর ফলে এই ব্যবস্থা আরো একধাপ এগিয়ে গেল।