পল্লব হাজরা, পানিহাটি: কল্পনার ভেলা ভাসানো ছেলেবেলার অনেকটা জুড়ে থাকেন ঠাকুমা দিদিমারা। তাঁঁদের কাছে শোনা রূপকথার গল্প অলস দুপুরগুলোকে সোনালী করে তোলে আবার সত্যজিৎ রায়ের গুপী গাইন বাঘা বাইন কিংবা ফেলুদার মতো গল্প শুনে মনটা চনমনে হয়ে ওঠে। ছেলেবেলার সেই সব স্মৃতি গুলোকেই ফের নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে দুর্গা পুজোর থিমের মাধ্যমে উদযাপন করতে চলেছে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ।
পানিহাটি এইচবি টাউনের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহনকারী বিজয়পুর সার্বজনীন তাদের ৭৩ তম বর্ষের দূর্গা পূজায় এ বছর গোটা শিল্পাঞ্চলকে চমক দিতে প্রস্তুত। তাঁদের এবছরে পূজার থিমের ভাবনা ‘শতবর্ষে সত্যজিৎ।’
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ চলে গিয়েছে গতবছর, কিন্তু এই বছর আপনাদের পুজোর থিম ভাবনা কেন ?
জানতে চাওয়া হলে বিজয়পুর সার্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা কৌশিক সেনগুপ্ত জানান, আসলে ” শতবর্ষে সত্যজিৎ” এই থিম ভাবনা আমাদের দু-বছর আগেই ছিল, কিন্তু কোভিডের কারণে করা হয়নি। আসলে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র সত্যজিৎ রায়। চিত্র পরিচালনার সাথে সাথে নির্দেশনা, চিত্রনাট্য রচনা, সাহিত্যচর্চা থেকে আবহসংগীত সব দিক দক্ষতার সাথে সামলেছেন প্রবাদপ্রতিম পরিচালক। প্রফেসার শঙ্কু থেকে ফেলুদা মতো ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে তারই হাত ধরে। পথের পাঁচালী , অপরাজিত, পরশপাথর, অপুর সংসার, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশের মতো চলচ্চিত্র আজও দর্শক উৎসাহের সাথে উপভোগ করেন। দেশ বিদেশের নানান পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে তারই স্মৃতিকে আঁকড়ে ৭৩তম বর্ষের পুজোয় আমাদের থিম ‘ শতবর্ষে সত্যজিৎ।’
তাহলে সত্যজিৎ রায়কে ঘিরে পুজোর চমক কি কি থাকছে ?
কৌশিক বাবু জানান, “সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সিনেমার স্লট গুলোই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কয়লার খনিতেই যে হীরা পাওয়া যায়, হীরক রাজার দেশে’র সেই স্লটটি থাকবে প্রথমে। এবং সেই খনির ভিতর দিয়েই দর্শনার্থীদের মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে। মূল মন্দিরে প্রবেশ করতেই বাঁদিকে দেখা যাবে বেনারসের দশাশ্বমেদ ঘাট অর্থাৎ যা দেখা গিয়েছিল ফেলুদা সিরিজে।
ঠিক তার ডান দিকে দেখা যাবে সোনার কেল্লা ছবির একটা অংশ। আর মূল মন্ডপ জুড়ে থাকছে সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সময়ের ছবির কোলাজ। আর মূল মণ্ডপের সিলিং এ দেখা যাবে সত্যজিৎ রায়ের নিজের হাতে আঁকা বিভিন্ন সিনেমায় দেখানো ছবির রেপ্লিকা গুলো।”
সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়ের সাথে বিজয়পুর সার্বজনীন থেকে কয়েকজন সদস্য দেখা করে তাঁদের এই বছরের পুজোর থিমের কথা বলা হলে সন্দীপ বাবু ভীষণ আপ্লূত হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। কোনও পুজোর উদ্বোধন করতে তিনি যান না বলে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল আড্ডায় বসার কথা জানান সন্দীপ বাবু। সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান ক্লাব কর্তারা। তবে এখানেই শেষ নয়, ওই দিনের ভার্চুয়াল আড্ডায় সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করেছেন যারা তাদের মধ্যে অলকানন্দা রায়, বরুন চন্দ এবং কৌশিক সেনও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিজয়পুর সার্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা কৌশিক সেনগুপ্ত।