ভবানীপুর, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী অবস্থান নিশ্চিত করেছেন, সেখানে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendhu Adhikari) তাঁর রাজনৈতিক কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করছেন। নন্দীগ্রামের এই বিজেপি নেতা সম্প্রতি এই এলাকাতে নিজের শক্তি জোরদার করার লক্ষ্যে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি নতুন কার্যালয় খুলতে যাচ্ছেন, যা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব ভোটারের এলাকার মধ্যে। শুভেন্দু অধিকারীর এ পদক্ষেপ রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই চাঞ্চল্যকর এবং ভবানীপুরের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূচনা হতে পারে।
শুভেন্দুর ভবানীপুরে আগমন: নতুন রাজনৈতিক গেম
শুভেন্দু অধিকারী কিছুদিন আগে মন্তব্য করেছিলেন, নন্দীগ্রামের থেকে ভবানীপুরে জয়ী হওয়া সহজ। যদিও এই মন্তব্য প্রথমে বেশ সাদামাটা মনে হতে পারে, তবে তার মধ্যে থাকা রাজনৈতিক প্রতীকী ক্ষমতা ও গুরুত্ব অনেক গভীরে চলে যায়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ভবানীপুরের ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। যদিও তৃণমূল ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল, তবে এই সব পরিসংখ্যান শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক পদক্ষেপকে আরও কার্যকরী করে তুলছে।
শুভেন্দু অধিকারী ভবানীপুরে তার দলের শক্তি স্থাপন করতে চাইছেন, যা একটি দুর্দান্ত কৌশল হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি তৃণমূলের মঞ্চের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দাপট দেখিয়েছেন। তার মতে, ভবানীপুরের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী ফলাফল খুব একটা বিপরীত ছিল না। ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৭৩, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে। মুখ্যমন্ত্রী ৭৩ নম্বরের ওয়ার্ডের ভোটার। আর লোকসভা ভোটের নিরিখে এই ওয়ার্ডে বিজেপি পিছিয়ে মাত্র ২৭৯ ভোটে। সে কারণে মুখ্যমন্ত্রী যে ওয়ার্ডের ভোটার ওই এলাকায় বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়ে তিনি নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যালয় খুলতে চান শুভেন্দু।
ভবানীপুরে বিজেপির আসল লক্ষ্য
২০১১ সালের নির্বাচনের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি এবং জনসাধারণের মনোভাব ভবানীপুরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। তবে বিজেপি, বিশেষত শুভেন্দু অধিকারী, এই একনায়কির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নামছে। ভবানীপুরের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা বেশি, যা বিজেপির জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কিন্তু, শুভেন্দু এই এলাকার অন্য অংশে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে উদ্্যমী। যদিও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মালা রায় ৮,২৭১ ভোটের লিড পেয়েছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন, ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে বাকি অঞ্চলে ঠিকঠাক লড়াইয়ের মাধ্যমে জয়ী হওয়া সম্ভব।
তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ভবানীপুরে তাঁর দলের কর্মীদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা। তবে এই কর্মীদের পরিচয় গোপন রাখা হবে, যা রহস্যময় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি এটি তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুভেন্দুর একটি নতুন চ্যালেঞ্জও হতে পারে।
ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলের জন্য শুভেন্দু অধিকারীর এই নতুন পদক্ষেপ একটি অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে। শুভেন্দু ভবানীপুরে নিজের দলের ভিত্তি শক্তিশালী করতে চাইছেন, এবং তার এই উদ্দেশ্য তৃণমূলের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তৃণমূলের কাছে প্রশ্ন থাকবে, তারা কীভাবে এই নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে। একইভাবে, শুভেন্দু অধিকারীর ভবানীপুরে রাজনৈতিক কার্যক্রম যতই তীব্র হবে, ততই তা রাজনৈতিক ময়দানে আরও বড় লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাবে।
তবে,ভবানীপুরে শুভেন্দু অধিকারী একেবারে নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রবেশ করতে চলেছেন, যা ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে একটি তীব্র ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই নিশ্চিত। তৃণমূলের জন্য এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, তবে এর পরিণতি কি হবে, তা সময়ই বলে দেবে।