TMC vs BJP: শমীকের মন্তব্যে শোরগোল: রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জোট ও ‘সেটিং’ তত্ত্বের নতুন বিতর্ক

নির্বাচনী আবহের উত্তাপ বাড়ছে, আর এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জন্ম দিয়েছি,” রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। বরাবরই সিপিএম এবং কংগ্রেস তৃণমূল ও বিজেপি (TMC vs BJP)-র মধ্যে ‘সেটিং’-এর অভিযোগ তুলে আসছে, আর শমীকের এই মন্তব্য সেই বিতর্ককেই আরও শক্তিশালী করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বক্তব্য নিছক কথার জাগলারি না কি এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক চাল, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।

শমীকের মন্তব্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:

শমীক ভট্টাচার্য তাঁর মন্তব্যে সরাসরি বলেছেন যে কংগ্রেসের ‘প্রবল গর্ভযন্ত্রণার’ সময় অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আডবানী ‘লেবার রুমে’ উপস্থিত না থাকলে তৃণমূলের জন্ম হতো না। এই উপমা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে তিনি দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। প্রথমত, তৃণমূলের জন্মের সময় বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের সমর্থন ছিল। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল গঠন করেন, তখন তিনি এনডিএ-র শরিক হয়েছিলেন এবং বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। এই ইতিহাস সর্বজনবিদিত। শমীকের বক্তব্য সেই ঐতিহাসিক সত্যকেই নতুন করে সামনে এনেছে, যা তৃণমূলের ‘একা চলো রে’ নীতির সঙ্গে একটি বৈপরীত্য সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয়ত, শমীকের এই মন্তব্য সিপিএম ও কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের ‘সেটিং’ তত্ত্বকে নতুন করে বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে। বিশেষ করে মহম্মদ সেলিম এবং অন্যান্য বাম নেতাদের অভিযোগ যে তৃণমূলের জন্মদাতা আরএসএস, যা এখন বিজেপি-র জন্মদাতা হিসাবেও পরিচিত, এই বক্তব্যকে শমীকের মন্তব্য আরও জোরালো করেছে। এর ফলে বিজেপি-কে তৃণমূলের বি-টিম হিসেবে প্রচার করার সুযোগ পাচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট।

তৃণমূল ও সিপিএম-এর প্রতিক্রিয়া:

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ শমীকের মন্তব্যকে ‘কথার জাগলারি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে দুর্বল এবং বামেদের ভোট বিজেপি-তে যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি বিজেপি-র উত্থানকে বামেদের দুর্বলতার ফল হিসেবে দেখিয়েছেন, যা তৃণমূলের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে তৃণমূল একক শক্তিতেই লড়ছে এবং জিতছে।

অন্যদিকে, সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শমীক এবং তৃণমূল উভয়কেই একযোগে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে শমীকের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অবশেষে ‘তৃণমূলের জন্মদাতা কে’ এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল। তাঁর বক্তব্য, তৃণমূলের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত বিজেপি-র কাছে ঋণ শিকার করতে হয়। এই মন্তব্য বামেদের রাজনৈতিক কৌশলকে স্পষ্ট করে। তারা বোঝাতে চায় যে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, এবং তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে।

ভবিষ্যতের রাজনৈতিক জল ঘোলা:

শমীকের এই মন্তব্য আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন ঢেউ তুলেছে। একদিকে, এটি তৃণমূলের ‘মাটি ও মানুষের দল’ হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে কিছুটা দুর্বল করতে পারে। অন্যদিকে, এটি বাম-কংগ্রেস জোটকে তৃণমূল ও বিজেপি (TMC vs BJP) উভয়কেই আক্রমণ করার একটি নতুন হাতিয়ার দিয়েছে। এই মন্তব্যের ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র হতে পারে এবং ভোটারদের মধ্যে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। শমীকের এই চাল কি বিজেপি-কে লাভবান করবে নাকি এর উল্টো ফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, এই বিতর্ক আগামী দিনের নির্বাচনী প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকবে।