খবর এইসময়, নিউজ ডেস্কঃ বিজেপি মহিলা মোর্চা আইন অমান্য কর্মসূচি নিয়ে আরো একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাংলার রাজনীতি। বৃহস্পতিবার দিনভর দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াল কলকাতা-সহ একাধিক জেলায়। ভোট পরবর্তী হিংসার প্রতিবাদে বিজেপির এই কর্মসূচি থেকে রাজ্যে জুড়ে মহিলা মোর্চার কয়েক হাজার সদস্য এদিন গ্রেফতার হয়েছেন বলে বিজেপি সুত্রের খবর।
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যজুড়ে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। মহিলারা অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা প্রশ্নের মুখে অভিযোগ তুলেই ১৬ অগস্ট পর্যন্ত আটদিনের পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপি মহিলা মোর্চা। সেইমত আজ বৃহস্পতিবার ভবানীভবনের সামনে বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের নেতৃত্বে একটি মিছিল পৌঁছতেই বাধা দেয় পুলিশ। পাল্টা বিজেপি কর্মীরাও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের তর্কাতর্কি, ধস্তাধস্তির পর একাধিক বিজেপি মহিলা কর্মীকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তালিকায় ছিলেন অগ্নিমিত্রাও। এখান থেকে প্রায় ৪৫ জনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, চুঁচুড়ায় বিজেপি মহিলা মোর্চার আইন অমান্য ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় আখনবাজারে। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা ঘিরে শুরু হয় উত্তেজনা। বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের টেনে সরিয়ে দেয়। একজন মহিলা বিজেপি কর্মী রাস্তায় পরে গিয়ে আহত হন বলে অভিযোগ। তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিন বিজেপি মহিলা কর্মীদের আটকাতে প্রচুর মহিলা পুলিশ মোতায়েন করে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর কিংবা বাঁকুড়ার শালতোড়া সর্বত্রই একই ছবি।
শালতোড়া বিধানসভার বিধায়ক চন্দনা বাউরি জানান, “ভোট পরবর্তী হিংসার ফলে ভারতীয় জনতা পার্টির অনেক সদস্য বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। তাঁদের পরিবারের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনেরও এতে গাফিলতি রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করলে এটার থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। না হলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব আমরা।”
হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় এসডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বাগনানে গণ-ধর্ষণকাণ্ডের মূল দুই অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ওঠে। বিজেপি মহিলা মোর্চার হাওড়া জেলা গ্রামীণ সভাপতি মামনি মালিক বলেন, পুলিশ মূল অপরাধীদের আড়াল করছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করতেই হবে।
আসানসোলে বিজেপির মহিলার মোর্চার আইন অমান্য কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। আসানসোল আদালত চত্বরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্যরা। পুলিশ অবস্থান তুলে দিলে মহিলা মোর্চার সদস্যরা আসানসোল মহিলা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান।
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া দুর্গাচক সুপার মার্কেট থেকে এদিন মিছিল বের হলেও মহকুমা শাসকের অফিসের আগেই মঞ্জুশ্রী মোড়ে আটকে দেয় বিশাল পুলিশবাহিনী। এরপরই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে মহিলা মোর্চার ধস্তাধস্তি। প্রায় ঘণ্টাখানেক রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিশাল মহিলা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় পাঁচজন মহিলা মোর্চার সদস্য হলদিয়া মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করেন।
বনগাঁ এসপি অফিসও ঘেরাও করা হয় এদিন। কিছুক্ষণ অবস্থান-বিক্ষোভ চলার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের তুলতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এ বিষয়ে বনগাঁ বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও বিজেপি মহিলা মোর্চার আইন অমান্য কর্মসূচি ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। জলপাইগুড়িতে ব্যারিকেড ভেঙে থানায় ঢোকেন মহিলা মোর্চার কর্মীরা। এর জেরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এই কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজু-সহ ২৫ জন বিজেপি কর্মী গ্রেফতার হন এদিন।
মালদহে এদিন দুপুর থেকেই জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছিল নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। র্যাফ সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। এদিন আন্দোলনের সময় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে যদিও তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়।
আলিপুরদুয়ারে বিজেপির আইন অমান্য আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে জেলা প্রশাসনিক ভবন ডুয়ার্স কন্যার আশপাশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার বলয় তৈরি করে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ। এদিন একটি বিক্ষোভ মিছিল আলিপুরদুয়ার আদালত সংলগ্ন এলাকা পরিক্রমা করে জেলা প্রশাসনিক ভবন ডুয়ার্স কন্যার সামনে পৌঁছয়। সেখানেই মহিলা মোর্চার বিক্ষোভ মিছিল থেকে আটকে দেয় আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ। এরপর প্রায় আধ ঘণ্টা সেখানেই চলে বিক্ষোভ।