নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে ১৩ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু, সংঘর্ষে মৃত ১ জওয়ান

খবর এইসময়ঃ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের নাগাল্যান্ড রাজ্যে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে কমপক্ষে ১৩ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতের দিকে রাজ্যটির মোন জেলার টিরু-ওটিং নামক এলাকায় জঙ্গি সন্দেহে ওই নাগরিকদের ওপর নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি বর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আর তাতেই ১৩ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীদের সাথে সংঘর্ষে মারাত্মভাবে জখম ১ জন নিরাপত্তার রক্ষীরও মৃত্যু হয়েছে।

জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্রে খবর ‘শনিবার সন্ধ্যার পরে টিরু এবং ওটিং গ্রামের মধ্যবর্তী একটি জায়গায় শ্রমিকরা একটি কয়লা খনিতে কাজ শেষে একটি ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময়ই তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নাতাবাদী সংগঠন ‘ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট অব নাগাল্যান্ড- খাপলং (এনএসসিএন-কে)-এর ‘ইয়ুং অং’ গোষ্ঠীর সদস্যদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছিল সেনা সদস্যরা। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরও ২ শ্রমিকের।

ঘটনার খবর পেয়েই সেখানে ছুটে আসে গ্রামবাসীরা। এরপর উত্তেজিত জনতা সেনাবাহিনীর দুইটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। অবশেষে পরিস্থিতির সামাল দিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে আবারও গুলি চালাতে হয়। একসময় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংর্ঘর্ষ হয়। এবং তাতে ৫ গ্রামবাসী ও ১ নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়। দ্বিতীয় গুলি চালানোর ঘটনায় আরও ৯ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের মোন জেলার সদর শহরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাগাল্যান্ডের যে জেলায় এই ঘটনাটি ঘটেছে সেই ‘মোন’ এর সাথে মিয়ানমারের একাধিক অরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে এবং ওই এলাকায় এনএসসিএন-কে’এর ইয়ুং অং’ গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয়।
শনিবার রাতের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা এলাকায় নতুন করে অশান্তি এড়াতে প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নাগাল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী কোহিমাতে আসন্ন ‘হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল’ স্থগিত রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর রবিবার সকালে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও। সেইসাথে তদন্তের আশ্বাস এবং সকল পক্ষকে শান্তি বজায় রাখারও আবেদন জানান তারা।

ট্যুইট করে অমিত শাহ লেখেন ‘নাগাল্যান্ডের ওটিং এলাকায় একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় উদ্বিগ্ন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা। নিহতদের পরিবার যাতে সঠিক বিচায় পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্য সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্তকমিটি গঠন করেছে’।

এদিকে এই ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে রবিবার সকালেই তড়িঘড়ি রাজ্য সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর তরফেও ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’ করা হবে বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর তরফে দু:খপ্রকাশ করে রবিবার একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ‘জঙ্গি অভিযান চলাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গভীরভাবে অনুতপ্ত। এতগুলো মানুষের দুর্ভাগ্যজনক জীবন হানির ঘটনার ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে। ট্যুইট করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী লেখৈন ‘এই ঘটনা হৃদয় বিদারক। সরকারের উচিত এই ঘটনার জবাব দেওয়া। যখন আমাদের নিজেদের দেশের মাটিতেই সাধারণ নাগরিক, নিরাত্তারক্ষীরা নিরাপদ নয়- সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করছে’।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অসমের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ লিখেছেন ‘নাগ্যাল্যান্ডে মানুষের মৃত্যুর খবরে আমি সত্যিই শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি সরকারের কাছে আর্জি জানাবো যেন সত্যি ঘটনা সামনে আসে।’

Google news