জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া জেলায় একের পর এক বাঘের (Tiger) উপস্থিতি রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। গত এক মাসে তিনবার ওই অঞ্চলের জঙ্গলে বাঘের (Tiger) দেখা মেলা ঘিরে প্রশ্ন উঠছে—পশ্চিমের জেলাগুলিকে কি স্থায়ী ঠিকানা বানাতে চাইছে বাঘেরা (Tiger) ? বন দফতর এই বিষয়ে এখনও বাঘকে (Tiger) বন্দি করার বদলে নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৮ সালে বাঁকুড়া জেলা থেকে ঝাড়গ্রামের লালগড়ের জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল একটি বাঘ, যা মানুষের আক্রমণে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায়। এরপর ২০২৪ সালের শেষে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে পালিয়ে আসা বাঘিনি জিনাত ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার জঙ্গল পেরিয়ে বাঁকুড়ায় ধরা পড়ে। সেই ঘটনার পরে এক মাসে তিনবার ওই অঞ্চলের জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বন দফতরের মতে, মধ্যভারতের জঙ্গলে বাঘের বসবাসের জন্য যেসব উপযুক্ত পরিবেশ থাকে, সেই একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, এবং বাঁকুড়ার জঙ্গলে। ঘন জঙ্গলের মাঝে ঝোরা, পর্যাপ্ত পানীয় জল এবং বুনো শূকর, হরিণ-সহ বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণীর প্রাচুর্যই বাঘের আকর্ষণের মূল কারণ। বন দফতরের দাবি, এই পরিবেশই হয়তো বাঘদের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করছে।
বাঁকুড়ায় পাঁচ দিন ধরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বাঘ এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষের ক্ষতি করেনি বা লোকালয়ে হানা দেয়নি। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই গভীর জঙ্গলে সরে যাচ্ছে বাঘটি। তার দ্রুত অবস্থান বদল এবং রেডিও কলার না থাকার কারণে তাকে নজরদারিতে রাখা বন দফতরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঘকে বন্দি করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে বন দফতর। বরং তার গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে যাওয়া হবে। তাদের মূল লক্ষ্য একদিকে বাঘের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অন্যদিকে জঙ্গলমহলের মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখা।
২০১৮ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে এবং বাঘের স্বাভাবিক জীবনচক্র বজায় রাখতে বন দফতর এখন বাঘের ওপর নজরদারি চালিয়েই পরিস্থিতি সামলানোর পক্ষে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বাঘের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত। জঙ্গলমহলে বাঘের ক্রমাগত আগমন এবং সেখানে বসবাসের সম্ভাবনা বন দফতর এবং পরিবেশবিদদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন দফতরের পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয়।